পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন এর গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা এবং তথ্য:
পদার্থ সাধারণত কঠিন তরল ও গ্যাসীয় এই তিন অবস্থায় থাকতে পারে। পদার্থকে ঠান্ডা বা গরম করে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন করা যায়। এরূপ পরিবর্তনকে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন বা অবস্থান্তর বলে।
2) অবস্থার পরিবর্তন কাকে বলে?
- কোন পদার্থের যেকোন এক ভৌত অবস্থা থেকে অন্য এক অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার ঘটনাকে অবস্থার পরিবর্তন বা অবস্থান্তর বলে। এই পরিবর্তন গুলি হল গলন, কঠিনীভবন, বাষ্পীভবন, ঘনীভবন।
3) গলন কাকে বলে?
- তাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থের তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে গলন বলে। আবার নির্দিষ্ট চাপে কোন তরল পদার্থ থেকে ক্রমশ তাপ বের করে নিতে থাকলাম একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় পৌঁছে তরলটি জমে কঠিনে পরিণত হয়, এই ঘটনা কি
4) কঠিনীভবন কাকে বলে?
- তাপ নিষ্কাশন এর ফলে তরল পদার্থের কঠিন এ পরিণত হওয়ার ঘটনাকে কঠিনীভবন বলে।
5) গলনাঙ্ক কাকে বলে?
- প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে(75 সেমি পারদ স্তম্বের চাপ) যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোন বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থ গলে তরলে পরিণত হয়, সেই উষ্ণতাকে ওই পদার্থের স্বাভাবিক গলনাংক বা শুধু কলঙ্ক বলে। যেমন বরফের গলনাঙ্ক জিরো ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বলতে আমরা বুঝি প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে বিশুদ্ধ বরফ জিরো ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড 273 কেলভিন উষ্ণতায় গলে জলে পরিণত হয়।
6) হিমাঙ্ক কাকে বলে?
- প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে(75 সেমি পারদ স্তম্বের চাপ) যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোন বিশুদ্ধ তরল পদার্থ তাপ বর্জন করে জমে কঠিনে পরিণত হয় সেই উষ্ণতাকে ওই তরলের স্বাভাবিক হিমাঙ্ক বা শুধু হিমাঙ্ক বলে। যেমন প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে জিরো ডিগ্রী 273 কেলভিন উষ্ণতায় বিশুদ্ধ জল জমে বরফে পরিণত হয়। সুতরাং জলের হিমাঙ্ক জিরো ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বা 273 কেলভিন।
7) পুনঃশিলীভবন কাকে বলে?
- চাপ প্রয়োগে বরফকে গলানো এবং প্রযুক্ত চাপ তুলে নিয়ে বরফ গলা জলকে আবার বরফে পরিণত করার ঘটনাকে পুনঃশিলীভবন বলে।
8) হিমমিশ্র কাকে বলে?
- যেসব মিশ্রণ দিয়ে খুব কম উষ্ণতার সৃষ্টি করা যায় সেইসব মিশ্রণকে হিমমিশ্র বলে। যেমন তিনভাগ ওজনের বরফ গুঁড়োর সঙ্গে এক ভাগ ওজনের সাধারণ লবণ মেশালে মিশ্রণের উষ্ণতা ক্রমশ কমে প্রায় -23 ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়। একে হিমমিশ্র বলে।
9) বাষ্পায়ন কাকে বলে?
- যে কোন উষ্ণতায় তরল এর উপর থেকে ধীরে ধীরে বাষ্পে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে বাষ্পায়ন বলে। যেমন- ইথার, স্পিরিট, অ্যালকোহল ইত্যাদি।
10) স্ফটন কাকে বলে?
- একটি নির্দিষ্ট উষ্ণতায় তরল এর সব অংশ থেকে দ্রুত বাষ্পীভবনের প্রক্রিয়াকে স্ফুটন বলে।
11) স্ফটনাঙ্ক কাকে বলে?
- প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে যে নির্দিষ্ট উষ্ণতায় তরলের স্ফুটন হয়, সেই উষ্ণতাকে তরলের স্ফুটনাংক বলে। যেমন জলের স্ফুটনাঙ্ক 100 ডিগ্রী সেলসিয়াস বলতে বোঝায় যে, প্রমাণ বায়ুমন্ডলীয় চাপে বিশুদ্ধ জল 100 ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতায় ফুটে বাষ্পে পরিণত হয়।
বাষ্পায়ন এবং স্ফুটনের মধ্যে পার্থক্য:-
বাষ্পায়ন যে কোন উষ্ণতায় ঘটে, কিন্তু স্ফুটন নির্দিষ্ট চাপে, নির্দিষ্ট উষ্ণতায় ঘটে।
বাষ্পায়ন খুব ধীরে ধীরে হয়, কিন্তু স্পটন খুব দ্রুত হয়।
বাষ্পায়ন এর ফলে তরলের উষ্ণতা কমে, স্ফুটন এর সময় তরলের উষ্ণতা একই থাকে।
বাষ্পায়ন নিঃশব্দে হয়, স্ফুটন সশব্দে হয়।
বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপের বেশিরভাগ তরল নিজে দেহ থেকে সংগ্রহ করে, স্টুডেন্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ বাইরে থেকে সরবরাহ করা হয়।
12) ঘনীভবন কাকে বলে?
- কোন পদার্থের বাষ্প অবস্থা থেকে তরলে পরিণত হওয়ার ঘটনাকে ঘনীভবন বলে। যেমন জলীয় বাষ্পকে ঠান্ডা করলে তা ঘনীভূত হয়ে জলে পরিণত হয়।
13) শিশিরাঙ্ক কাকে বলে?
- যে উষ্ণতায় কোন নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ু তার মধ্যে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের মাধ্যমে সম্পৃক্ত হয়, সেই উষ্ণতা কে ওই বায়ুর শিশিরাঙ্ক বলে।
14) শিশির কাকে বলে?
- বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্ক এর চেয়ে কমে গেলে, ওই বায়ুর কিছু পরিমাণ জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলবিন্দু আকারে ঘাস, পাতা প্রভৃতির ওপর জমা হয়। এই জল বিন্দুগুলিকে শিশির বলে।
15) কুয়াশা কাকে বলে?
- বায়ু প্রবাহহীন রাত্রে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বায়ুর উষ্ণতা কোন কারণে কমে গেলে ওই স্থানের বায়ু ওর জলীয়বাষ্পের মাধ্যমে সম্পৃক্ত হয়। বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্ক এর নিচে নেমে গেলে ওই বায়ুর পরিমাণ জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ভাসমান ধূলিকণা, কয়লার গুঁড়ো প্রকৃতির উপর জলকণার আকারে জমে বায়ুতে ভাসতে থাকে। একেই কুয়াশা বলে ।
16) সম্পৃক্ত বাষ্প কাকে বলে?
- কোন নির্দিষ্ট উষ্ণতায়, কোন নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জলীয়বাষ্প উপস্থিত থাকলে, সেই বাষ্পকে সম্পৃক্ত বাষ্প বলে।
17) লীন তাপ কাকে বলে?
- উষ্ণতা অপরিবর্তিত রেখে আকবরের কোন পদার্থের অবস্থার সম্পূর্ণ পরিবর্তন ঘটাতে যে পরিমান তাপ প্রয়োগ বা নিষ্কাশন করা হয়, সেই তাপকে ওই পদার্থের লিনতাপ বলে।
সিজিএস এবং এসআই পদ্ধতিতে লীন তাপের একক যথাক্রমে ক্যালোরি/গ্রাম এবং জুল/কিলোগ্রাম।
18) হাতে ইথার অথবা মেথিলেটেড স্পিরিট ঢাললে ঠান্ডা লাগে কেন?
- হাতে ইথার বা মেথিলেটেড স্পিরিট ঢাললে ঠান্ডা বোধ হয়। কারণ ইথার বা মেথিলেটেড স্পিরিট উদ্বায়ী তরল বলে দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয় এবং বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ হাত থেকে সংগ্রহ করে। ফলে হাতের বা গায়ের যে অংশে ইথার বা মেথিলেটেড স্পিরিট ঢালা হয় সে জায়গা ঠান্ডা বোধ হয়।
19) মাটির কলসির জল পিতল বা কাঁচের পাত্রে রাখা জলের চেয়ে বেশি ঠান্ডা হয় কেন?
- মাটির কলসির গান অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। ওই ছিদ্র দিয়ে কলসির জল চুঁইয়ে বাইরে আসে এবং বাষ্পীভূত হয়। এই বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীন তাপ জল ও কলসি থেকে সরবরাহ হয়। ফলে কলসি ও তার ভেতরের জল ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু পেতল বা কাঁচের পাত্রের গায়ে কোন ছিদ্র থাকে না। তাই ওইসব পাত্রের গা দিয়ে জল চুঁইয়ে বাইরে এসে বাষ্পীভূত হতে পারেনা। শুধুমাত্র পাত্রের মুখ দিয়ে খুব অল্প জল বাষ্পীভূত হয়। তাই পিতল বা কাঁচের পাত্রে রাখা জল কেমন ঠান্ডা হয়না।