পদার্থ ও শক্তি অধ্যায়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা
💻Table of Contents
1) পদার্থ কাকে বলে?
- যা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, যার ভর আছে এবং যা কিছু পরিমাণ স্থান দখল করে থাকে, তাকে পদার্থ বলে।
যেমন:- জল, বায়ু, লাোহা, তামা, অক্সিজেন প্রভৃতি হল পদার্থ।
2) ভর কাকে বলে?
- কোন বস্তুতে মোট যে পরিমাণ পদার্থ থাকে তাকে ঐ বস্তুর ভর বলে।যেমন একটি পেরেকের মোট যে পরিমাণ লৌহ থাকে, তাই পেরেকটির ভর। সাধারণ তুলা যন্ত্রের সাহায্যে বস্তুর ভর মাপা হয়। ভোরের মান আছে কিন্তু অভিমুখ নেই। তাই ভর একটি স্কেলার রাশি। এস আই পদ্ধতিতে ভরের একক কিলোগ্রাম এবং সিজিএস পদ্ধতিতে ভরের একক গ্রাম।
3) বরকে বস্তুর অপরিহার্য ধর্ম কেন বলে?
- কোন বস্তুকে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে কিংবা পৃথিবীর বাইরের কোন গ্রহ, উপগ্রহ বা নক্ষত্রে নিয়ে গেলে বস্তুর ভর অপরিবর্তিত থাকে। তাছাড়া স্থিতি, গতি, চুম্বকত্ব, তড়িৎ অবস্থা, উষ্ণতা প্রকৃতির কোন কিছুই বস্তুর ভরের পরিবর্তন ঘটতে পারে না। তাই ভরকে বস্তুর অপরিহার্য ধর্ম বলে।
4) অভিকর্ষ কাকে বলে?
- পৃথিবীর উপরে বা পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা প্রত্যেক বস্তুকে পৃথিবী নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর এই আকর্ষণ বলকে অভিকর্ষ বলে। এই অভিকর্ষের জন্যই কোন বস্তুকে উপরের দিকে ছুড়ে দিলে আবার পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিেরে আসে।
5) অভিকর্ষজ ত্বরণ কাকে বলে?
- অভিকর্ষের ক্রিয়াই অবাধে ভূপৃষ্ঠে পতনশীল বস্তুর সময়ের সাপেক্ষে বেগ বৃদ্ধির হারকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। একে 'g' অক্ষর দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
6) ভার বা ওজন কাকে বলে?
-যে বলের মাধ্যমে পৃথিবী কোন বস্তুকে তার কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে, সেই বলকে ঐ বস্তুর ভার বা ওজন বলে। ওজনের মান অভিমুখ দুই আছে। ওজন একটি ভেক্টর রাশি। স্প্রিং তুলা বস্তুর ভার বা ওজন মাপা হয়।
7) ভরের নিত্যতা বা সংরক্ষণ সূত্র:
-পদার্থের ভর অবিনাশী। একে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। যেকোন ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনে পদার্থের রূপান্তর ঘটে মাত্র, পরিবর্তনের আগে ও পরে পদার্থের মোট ভর অপরিবর্তিত থাকে। এই বিশ্বে মোট ভরের পরিমাণ ধ্রুবক।
8) শক্তি কাকে বলে?
-কোন বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। শক্তিকে চোখে দেখা যায় না। শক্তি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কিন্তু ভরহীন। শক্তি রূপ পরিবর্তন করেতে পারে,কিন্তু শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না।
8) শক্তির নিত্যতা সুত্রঃ
-শক্তির সৃষ্টি বা বিনাস নেই । একে কেবলমাত্র এক রূপ থেকে অন্য এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তন করা যায়। বিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ ধ্রুবক। যেমন ছাত্র-শিক্ষক শূন্য শ্রেণিকক্ষে বৈদ্যুতিক পাখা চালানো থাকলে তড়িৎ শক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এক্ষেত্রে শক্তির অপচয় হয় না, সংরক্ষণ হয়। দৈনন্দিন জীবনে শক্তির সংরক্ষণের একটি উপায় হল সঞ্চয়ক কোষ।
9) গতিশক্তি কাকে বলে?
- কোন গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য যে শক্তির অধিকারী হয় তাকে গতি শক্তি বলে। যেমন- পাহাড়ি নদীর জল উঁচু স্থান থেকে যখন নিচে নামে তখন ওই জলপ্রবাহ ভারী পাথর খন্ডকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিয়ে যায় অর্থাৎ কাজ করে। এখানে জলপ্রবাহ তার গতির জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য লাভ করে তাহল গতিশক্তি।
10) স্থিতিশক্তি কাকে বলে?
- স্বাভাবিক অবস্থান বা আকৃতির পরিবর্তনের ফলে স্থিতি শীল বস্তুতে যে শক্তি জমা হয় তাকে স্থিতিশক্তি বলে। যেমন- ঘড়িতে দম দিলে ঘড়ির স্প্রিংয়ের সংকুচিত হওয়ায় স্প্রিং এর আকৃতি পরিবর্তন ঘটে। ফলে স্ক্রিনটি তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সময় কাজ করার সামর্থ্য লাভ করে, জাফরিকে সচল রাখে। অর্থাৎ সংকুচিত স্প্রিংয়ে যে শক্তি সঞ্চিত থাকে তাহল স্থিতিশক্তি।
11) রাসায়নিক শক্তি কাকে বলে?
- রাসায়নিক পরিবর্তনে যে শক্তির সৃষ্টি হয়, তাকে রাসায়নিক শক্তি বলে। যেমন চুনে জল ঢাললে তাপ উৎপন্ন হয়।
12) পারমাণবিক শক্তি কাকে বলে?
- ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, প্লুটোনিয়াম প্রভৃতি মৌলের পরমাণু কেন্দ্রকের বিভাজন ঘটে যে নতুন মৌল পাওয়া যায় তার ভর যদি মৌলটির ভরের তুলনায় সামান্য কম হয়। এই বিলুপ্ত ভরের সমতুল্য প্রবল শক্তির সৃষ্টি হয়, একে নিউক্লিয় শক্তি বা পারমাণবিক শক্তি বলে।
13) শক্তির রূপান্তর কাকে বলে?
- শক্তির এক রূপ থেকে অন্য যে কোন এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। শক্তির এই পারস্পরিক পরিবর্তনকে শক্তির রূপান্তর বলে। শক্তি বিভিন্নরূপে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সব শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।